রাজধানীতে বেড়েছে কিশোর গ্যাং, মাসে ১৫ থেকে ২০ খুন

1095
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

এসএম শামসুজ্জোহা: ঢাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত আবার বেড়েছে। পুলিশের তৎপরতার মধ্যেই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বেশ কিছু অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। কিশোর গ্যাং ধরতে নতুন ভাবে অভিযানে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ অভিযানে গ্যাং সদস্যদের অবস্থান ও তথ্য জানতে অত্যাধুনিক মানের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করা হতে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সন্তান কোথায় যাচ্ছে কি করছে সে বিষয়ে নজর অবিভাবকদের রাখতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এরই মধ্যে রাজধানীর হাতিরঝিল, উত্তরা, মতিঝিল ও মোহাম্মাদপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্যাং কালচারে সম্পৃক্ত প্রায় ২শ’ কিশোরকে গ্রেফতার করেছে। শুধু রাজধানীতে পাঁচ শতাধিক কিশোর ৪০ টি গ্যাংয়ের সাথে যুক্ত। যারা চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবন ও বিক্রিসহ ঘটাচ্ছে খুনের মত নানা ঘটনা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মাহবুব আলম জানিয়েছেন, ঢাকায় প্রতিমাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০টি খুনের ঘটনা ঘটে। এরকমই ফেব্রুয়ারিতে দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছিল। গত ১০ ফেব্রুয়ারি কদমতলী থানার পূর্ব জুরাইনে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মো. জাকির হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে খুন করা হয়। একই ঘটনায় মজিবর রহমান ওরফে মোহন গুরুতর আহতন হন। এই ঘটনায় কদমতলী থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। আবার গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মুগদার মাণ্ডা এলাকায় কিশোর গ্যাং ব্যান্ডেজ গ্রুপের সদস্যরা হাসান নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত ও কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় মুগদা থানায় একটি মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগীর পরিবার।

এদিকে, সন্তানকে হারিয়ে এভাবেই প্রলাপ করছিলেন সোহাগ আহমেদের মা পারভীন বেগম। গত বছর ২৭ আগস্ট রাতে রাজধানীর উত্তরখান এলাকায় কিশোর গ্যাং দি বসের সদস্য মাহাবুব রাসেল ওরফে কাটার রাসেলের হাতে খুন হয় সে। চাকা থেকে কাদা ছেটানোর কারণে এক রিকশা চালককে তাদের মারের হাত থেকে বাঁচানো ছিল সোহাগের অপরাধ।

একই বছরের ১ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে আহাদ আলম শুভ মিয়াকে কুপিয়ে হত্যা করে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ১০ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ চলাকালে আত্মরক্ষার্থে শীতলক্ষ্যা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লে মিহাদ ও জিসান নামে দুই কিশোরের মৃত্যু হয়। ১ এপ্রিল ফতুল্লার দেওভোগ আদর্শনগর কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা শরিফ হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করে।
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উত্তরায় ডিসকো এবং নাইন স্টার গ্রুপের দ্বন্দ্বে নিহত হয় কিশোর আদনান কবির। তার পরের মাসে তেজকুনি পাড়ায় দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে খুন হয় কিশোর আজিজুল হক। বরগুনার নয়ন বন্ড তার ০০৭ গ্রুপ নিয়ে জনসম্মুখে রিফাত শরিফকে কুপিয়ে হত্যা করে।
আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য বলছে, রাজধানীর উত্তরা, খিলগাঁও, মতিঝিল, মান্ডা, দক্ষিণখান, টঙ্গী, ডেমরা, সূত্রাপুর, সবুজবাগ, খিলক্ষেত, মোহাম্মদপুরসহ কিশোর গ্যাংয়ের ১০টি এলাকাকে তারা শনাক্ত করেছে। আর এসব এলাকায় স্যাভেন স্টার, ব্যান্ডেজ গ্রুপ, বিগবস, ব্লাক মাম্বা, ডার্ক নাইটসহ ৪০টি কিশোর গ্যাংয়ের সাড়ে ৫০০ কিশোর বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের কাছে এখন স্মার্টনেস মানে শিশা বারে শিশা সেবন ও মদ খাওয়া। যার পরিণতি সম্প্রতি মোহাম্মাদপুরে ঘটে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষন ও হত্যার ঘটনা।

মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রুবাইয়াত জামান মোবাইলে বলেন, কিশোর গ্যাং মাঝেমধ্যেই তৎপর হয়ে উঠছে। আমরাও তৎপর রয়েছি। মূলত নিম্ম আয়ের পরিবারের সন্তানরা এই কিশোর গ্যাং কালচারের সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, করোনার লকডাউনের সময় কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলো নিষ্ক্রিয় ছিল। লকডাউনের পর তাদের আবার তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। আমাদের বিট পুলিশিংয়ের সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এলাকার মাদক ও কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোকে প্রতিরোধ করতে। তারা কাজ করছে। রুবাইয়াত জামান আরো বলেন, কিশোর অপরাধ নিয়ে একটি স্টাডি (গবেষণা) চলছে। স্টাডিতে কিশোররা কেন অপরাধে জড়াচ্ছে এবং তারা কোন পরিবার থেকে আসছে। এসবসহ পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন বিষয় উঠে আসবে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন