নেতাদের উন্নতি হলেও সংগঠনের উন্নতি হয়নি, বোধোদয় আওয়ামী লীগে

1092
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দলের বিভিন্ন স্তুরের নেতাকর্মীদের ভাগ্যের উন্নতি হলেও সাংগঠনিকভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উন্নতি হয় নাই। এমন বোধোদয় হয়েছে দলটির। নেতারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় নেতাকর্মীদের ভাগ্যের উন্নতি হলেও সাংগঠনিকভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে দলটি। এজন্য ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে তৃণমূলে সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন করে নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সোমবার (১ মার্চ) বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় এমন আলোচনা হয়ছে। সভায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।

মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। পরে বিশেষ বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর উত্তরের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ, উত্তরের অন্তর্গত থানা ও ওয়ার্ডের নেতারা। বিকেল তিনটায় সভা শুরু করে রাত ১০টার পরে বিশেষ বর্ধিত সভা শেষ হয়।

এসএম মান্নান কচি সংগঠনকে শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তোলার ওপর জোর দেন। দুর্দিনের ত্যাগী নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের বঞ্চিত হওয়ার দিকেও আঙুল তোলেন তিনি। দেশি-বিদেশি সরকারবিরোধী নানান মহল থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে জানিয়ে দলের নেতাকর্মীদের সবাইকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এই নেতা।

এসএম মান্নান কচি বলেন, এই সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রয়েছে। আজকে আমাদের সংগঠন যেভাবে মজবুত থাকার কথা ছিল, সেভাবে কিন্তু আজকে সংগঠন নেই। অনেক সুবিধাবাদী দলের মধ্যে ঢুকে দলকে ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধু কন্যার উন্নয়ন-সুনাম ভণ্ডুল করছে। এ জন্য তৃণমূল থেকে সম্মেলন করে সুবিধাবাদী, সুবিধাভোগী, যারা আজকে দলের দুর্নাম করছে, বিতর্ক সৃষ্টি করছে, তাদের বাদ দিতে হবে। এটা আমার মহানগর নেতৃবৃন্দের প্রতি নির্দেশ। আর কোনো ষড়যন্ত্র এই বাংলাদেশের মাটিতে বাস্তবায়িত হতে না পারে। মহানগর আওয়ামী লীগ সুসংগঠিতভাবে গড়তে চাই। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে উপহার দিতে চাই। তাই সর্বপ্রথমেই আমরা ইউনিট কমিটি থেকে শুরু করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সংগঠন কিন্তু শক্তিশালী নয়। ক্ষমতায় আসার পর সংগঠন দুর্বল হয়ে গেছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মেলন করে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে চাই। আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে, কিন্তু আমরা দেখি, আমাদের ত্যাগী নেতাকর্মী যারা আছেন, তারা কিন্তু এখনো পূর্বের মত আছেন। সরকার এতোদিন ক্ষমতায় তারাও বৈধভাবে ব্যবসা করে ভাল থাকতে পারত। কিন্তু নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা আছেন, আজকে বেশিরভাগই তাদেরকে উপেক্ষিত করছেন। আমাদের এমপিরা রয়েছেন, কমিশনাররা রয়েছেন, তাদের মারফতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। কিন্তু আপনারা সেই সহযোগিতা ত্যাগী নেতাকর্মীদের দিচ্ছেন না। তাদেরকে আপনারা সহযোগিতা করুন। তাদেরকে কাজ দিয়ে সহযোগিতা করুন। তারাও বৈধভাবে ভালোভাবে জীবনযাপন করুক।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সভায় বিভিন্ন দিক নির্দেশনা তুলে ধরে বলেন, আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছেন। আজকের এই বিশেষ বর্ধিত সভার টার্গেট, আমাদের ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শুরু করতে হবে। আজকে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার বদৌলতে কিন্তু আমরা তিনবার টানা ক্ষমতায় আছি।

সরকারের টানা মেয়াদে দেশের আর্থসামাজিক, অথনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। শুধু মানুষের উন্নয়ন হয় নাই। আমাদেরও কিছু না কিছু উন্নতি হয়েছে। আমরাও কিন্তু মোটাতাজা হয়েছি। আজকে ১২ বছর আগে আমার দলের যে কর্মী বাইকেলে চড়ত, সে নেতা এখন কমপক্ষে মোটরসাইকেল কিনেছে। যে নেতা ১২ বছর আগে মোটরসাইকেল চালাতেন, সেই নেতা কিন্তু এখন গাড়ি চালায়। আপনারা যারা এই জায়গায় উপস্থিত চোখ বন্ধ করে দেখেন ১২ বছর আগে আপনার অবস্থা কি ছিল? ১২ বছর পরে আজকে আপনার অবস্থা কি? নিজে দেখেন, কিছু না কিছু পরিবর্তন, কিছু উন্নতি কিন্তু আপনাদের সবার হয়েছে। কিন্তু একটু আগে সাধারণ সম্পাদক বললেন, মোহাম্মদ হানিফ ভাই ছিলেন আমাদের ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র। তিনি ছিলেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। ওই সময় ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। দীর্ঘ ১৭/১৮/১৬/১৫ বছর যাবৎ আমরা ইউনিট কমিটির সম্মেলন করতে পারি নাই। দীর্ঘদিন যাবৎ ম্যাক্সিমাম জায়গায় উত্তর-দক্ষিণে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি সর্বস্ব একটা কমিটি আছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি নাই।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যে পদ্ধতিতে সম্মেলন করে নেতা নির্বাচন করার কথা সেই পদ্ধতি থেকে কিন্তু আমরা সরে এসেছি। আমরা সিভি নেই, সিভি নিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করি। কিন্তু আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য, আমাদের গঠনতন্ত্র এইভাবে কমিটি করার প্রক্রিয়া এলাউ করে না।
বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি বলেন, সংগঠনকে প্রতিটি পর্যায়ে একেবারে ইউনিট থেকে ওয়ার্ড, থানা মহানগর প্রতিটি পর্যায়ে সুশৃঙ্খল এবং সুসংগঠতি করার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রতিদিন নিরলস পরিশ্রম করছেন, তার সুযোগ্য কর্মী হিসাবে আমরা যেন প্রতিটি কাজের স্বাক্ষর রাখতে পারি। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে এই অনুপ্রেরণা জোরালো করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কাদের বলেন, দেশে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ইতোমধ্যেই সম্মেলন শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন পর্যায়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশনা নেত্রী দিয়েছেন। আমরা এই বর্ধিত সভায় সুষ্পষ্ঠভাবে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে গঠনতন্ত্র অনুসরণে একটা গাইডলাইন দিতে চাই।

তিনি বলেন, পাশাপাশি কমিটি গঠন করার ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান ভারী করার জন্য নিজে লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, দলের অভ্যন্তরে সুবিধাবাদী বসন্তের কোকিল ঢুকে পড়েছে। এই সুবিধাবাদী বসন্তের কোকিলরা দুঃসময় এলে দলের সঙ্গে থাকবে না। তাই এই সুবিধাবাদীদের হাত থেকে, বসন্তের কোকিলদের হাত থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে। ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন