করোনায় ফের ঘরবন্দী বিরোধীদের রাজনীতি

1368
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

মো. শফিকুল ইসলাম: মিছিল সমাবেশ বিক্ষোভ উত্তাল ছিল চলতি বছরের শুরু থেকেই। করোনা প্রথম ঢেউ কিছুটা কমায় রাজধানী সহ সারা দেশেই উত্তাপ ছড়ায় রাজনীতি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দল ঘর গোছানো সহ সারাদেশে মিছিল, সমাবেশ ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচি পালন শুরু করে। বিপত্তি বাধায় করোনা। মার্চের শেষ সপ্তাহে থেকে আবারো ভয়ঙ্ককর হয়ে উঠেছে করোনা। ফের ঘরবন্দী হচ্ছে বিরোধী দলের রাজনীতি। মিছিল বিক্ষোভ সমাবেশের মত উত্তাপ ছড়ানো মাঠের রাজনীতিও দিয়েছে উড়াল। রাজনীতি চলছে ভার্চুয়ালে। করোনা আবারো গতি টেনে ধরেছে বিরোধীদের রাজনীতির।

জানা গেছে, করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকেই রাজপুেিথর রাজনীতির চিরচেনা উত্তাপ হারিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে বছরের শেষে নিরুত্তাপ রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি করে হেফাজতে ইসলাম। এই ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো রাজপথে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখালেও বিএনপি ছিল ‘কৌশলী অবস্থানে’। এরপর থেকেই রাজনীতি আবার মাঠে গড়ায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ কয়েকটি উপনির্বাচনে তৃণমূলে উত্তাপ ছড়ায়। জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিল ইস্যুসহ বিএনপির একাধিক কর্মসূচিতে রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। রাজনীতি ফের সংঘাতময় হয়ে ওঠে। সর্বশেষ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঘিরে রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি উত্তাপ ছড়ায়। মোদির ঢাকা সফর ঠেকাতে মরিয়া হয়ে ওঠে হেফাজতসহ ইসলামী দলগুলো। এখানেও কৌশলী অবস্থান নেয় বিএনপি। কয়েকটি এলাকায় হেফাজতে ইসলাম, পুলিশসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। মারাও গেছে কয়েকজন হেফাজতের কর্মী। নারকীয় আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বহু স্থাপনা। আর ঠিক এই মহূর্তে দেশের করোনা আগুনে ঠান্ডা হয়ে গেছে মাঠের রাজনীতি।

জানা গেছে, এরই মধ্যে বিএনপি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত করেছে। অন্যান্য দলও অঘোষিতভাবে কর্মসূচি সংকুচিত করেছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাসদ, বাসদ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রকাশ্য কর্মকান্ড ছিল। এখন প্রায় সব দলই কর্মসূচি ঘুটিয়ে নিয়েছে। তবে করোনাকালেও ভিডিও কনফারেন্স, ভার্চুয়ালি সমাবেশ রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এখনো চলছে। বিগত দিনের মতোই প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি একে অপরের সমালোচনায় ব্যস্ত ও মুখর।

এবিষয়ে গণস্বাস্থ্যর প্রতিষ্টাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী দিন পরিবর্তনকে বলেন, আশঙ্কাজনক ভাবে বেড়েই চলেছে করোনা। এখন দল মত নির্বিশেষে করোনা মোকাবেলা করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতাও বাড়াতে হবে। আমি মনে করি, দেশে তো এখন কোনো রাজনীতিও নেই। মানুষের ভোটের অধিকার বা কথা বলার স্বাধীনতা নেই। তাছাড়া এ মুহূর্তে রাজনীতির সময়ও নয়। তবে এখন রাজনীতি হওয়া উচিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু করোনাকালে রাজনৈতিক দলগুলো কতটা মানুষের কাছে যেতে পেরেছে। তারা যতটা মুখে বলে, ততটা মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। প্রচলিত রাজনীতিতে সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ। তাই করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও গুণগত পরিবর্তন আনা জরুরি।

দলীয় সূত্রমতে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন, সবাইকে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আপাতত কোনো সভা-সমাবেশ নয়। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দলের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। স্থায়ী কমিটির সঙ্গে ভার্চুয়াল সভা করে তিনি দলের সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ফোনালাপে করোনায় সতর্কভাবে চলাফেরা করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

বিএনপি নেতারা বলেন, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতেই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও জনসেবামূলক কাজ অব্যাহত থাকবে দলের নেতাকর্মীরা।

তারা বলেন, করোনা সংক্রমণ হঠাৎ বাড়ার কারণে দেশের জনগণ ও দলের নেতাকর্মী-সমর্থদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার কথা ভেবে ‘রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক’ সহ জনসমাগম ঘটে এমন সকল কাযক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপির স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তীর সব অনুষ্ঠানও স্থগিত করা হয়েছে। দলের অনেক নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তারা দলের দুঃসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই শূন্যস্থান কোনো দিনই পূরণ হবে না। জেলা ও উপজেলা থেকে প্রতিদিনই তাদের কাছে মৃত্যুর মতো দুঃসংবাদ আসছে। আক্রান্তের খবরও পাচ্ছেন।

দলের কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স দিন পরিবর্তনকে বলেন, জানায়, মোবাইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। নেতাকর্মী-সমর্থকদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না যাওয়া, সার্বক্ষণিক মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

এবিষয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান বলেন, বিএনপি জম্নলগ্নে থেকেই মানুষ ও মানবতার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। মহামারি করোনার মধ্যেও আপনারা মানবিক বিএনপি দেখেছেন। এ ধারা সবসময় অব্যাহত থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি প্রত্যেক মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। করোনার শুধু মাঠের রাজনীতিকে আঘাত করেনি, সকল বিষয়ে আঘাত করেছে। তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, করোনার প্রকোপ দিন দিন বেড়েই চলছে। এটা সরকারের উদাসীনতা ও ব্যর্থতা। দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা এখন দলীয় কর্মসূচিগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত রেখেছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারো রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্বাভাবিকভাবেই চলবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন