ভ্যাকসিন না পেয়ে ফেরত যাচ্ছে মানুষ, মজুত শেষ হবে ৭ দিনে

1289
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৮ এপ্রিল থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। তবে ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে ভ্যাকসিন না পেয়ে ফেরত আসতে হচ্ছে অনেককেই। এসএমএস পেয়ে যথাসময়ে গেলেও ভ্যাকসিন না পাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকায় কিছু সময় মানুষকে ফেরত যেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, নতুন ভ্যাকসিন না আসার কারণে মজুত যা আছে সেগুলো রেশনিং করা চালাতে বলা হয়েছে কেন্দ্রগুলোতে। আগামী ৭ দিনের মধ্যেই শেষ হতে যাচ্ছে ভ্যাকসিনের মজুত।

স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ভ্যাকসিনের বর্তমান যে মজুত আছে তা শেষ হয়ে গেলে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে প্রায় ১৪ লাখ মানুষকে, যারা প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছিলেন। তাই সরকারের জোর প্রচেষ্টা অন্তত ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন জোগাড় করা যাতে প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়।

শনিবার (৮ মে) রাজধানীর তেঁজগাওয়ে অবস্থিত জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে সকাল ১০টার দিকে ভ্যাকসিন নিতে যান ৭১ বছর বয়সী আবেদা খানম। তবে এদিন এই কেন্দ্রে ভ্যাকসিনের বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ৪০০ ডোজ। কিন্তু আগের দিন ৭০০ জনকে এসএমএস করায় এই কেন্দ্রে অনেককেই ফেরত যেতে হয়। পরবর্তী সময়ে আরও ২০০ ডোজ ভ্যাকসিন যোগাড় করা হলেও সবাইকে তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

এর আগে প্রায় একই অবস্থা দেখা যায় রাজধানী শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালেও। কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দের তুলনায় বেশি এসএমএস দিয়ে ফেলার কারণে অনেককে ফেরত যেতে হচ্ছে।

জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. দিলারা জামাল বলেন, এখন ভ্যাকসিন গ্রহীতার তুলনায় ভ্যাকসিনের বরাদ্দ অনেক কম। প্রতিদিন যা এসএমএস করা হয় তার তুলনায়ও দেখা যায় ভ্যাকসিনের সরবরাহ কম থাকছে। তাই অনেকে ভ্যাকসিন না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক বলেন, যে পরিমান ভ্যাকসিন আছে তাতে আমরা প্রতিটা কেন্দ্রকে বলেছি রেশনিং করে চালানোর জন্য। আর সেজন্য কিছু কেন্দ্রে সমস্যা হচ্ছে। তবে সেই সমস্যার দ্রুত সমাধানের চেষ্টাও করা হচ্ছে।

ভ্যাকসিন বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও দেশে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৩৪ লাখ মানুষ। এখনো আমাদের ঘাটতি আছে প্রায় ১৪ লাখ ডোজের। সরকারের হাতে থাকা ১০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনের মজুত শেষ হবে এ সপ্তাহেই। আর তাই বলা যায়, আপাতত দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন পাচ্ছে না প্রায় ১৪ লাখ মানুষ।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় ডোজের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আমাদের লাগবেই। আর তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপাতত জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যেন অন্তত ২০ লাখ ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা যায়। ইতোমধ্যেই দেশে ২৬ এপ্রিল থেকে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়েছে। সে হিসেবে আট সপ্তাহ সময়সীমা হবে ২৬ জুনে। আবার ১২ সপ্তাহ সময়সীমা হবে ২৬ জুলাই পর্যন্ত। এর মাঝে যদি আমরা ভ্যাকসিন পেয়ে যাই তবে আর সমস্যা হবে না।

দেশে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে জাতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল থেকে দেশে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিভিন্ন ধাপে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১ কোটি দুই লাখ চার হাজার ভ্যাকসিন এসে পৌঁছায়। এখন পর্যন্ত দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৬ জন। যারা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের মাঝে ৩৪ লাখ এক হাজার ৫৩১ জন দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। অর্থাৎ ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৩২৫ জনের এখনো ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া বাকি। তবে গাণিতিক হিসেব অনুযায়ী ভ্যাকসিন বাকি আছে ৯ লাখ ৮২ হাজার ৬১৩ ডোজ। অর্থাৎ দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিনের ঘাটতি থাকবে ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ৭১২ জনের।

ইতোমধ্যে দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি ও চীনের সিনোফার্মের ভ্যাকসিনের জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এগুলোর প্রয়োগ বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, যেহেতু আমাদের দেশে এখন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, তাই অন্য কোনো ভ্যাকসিন নিলে কোনো সমস্যা হবে কিনা সেগুলো বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করছেন। সিনোফার্ম, স্পুটনিক ভ্যাকসিনের প্রয়োগ বিষয়েও আমাদের কাজ করা হচ্ছে। তবে এগুলোর জন্য কিছু সমন্বয় করতে হবে কেন্দ্রগুলোতে। এক্ষেত্রে এখনো কেন্দ্র নির্ধারণ করা সম্ভব হয় নি।

এ দিকে ভ্যাকসিন বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. শামসুল হক বলেন, ভ্যাকসিন আসবে, তবে সেটি আসতে কিছুটা দেরি হতে পারে। এক্ষেত্রে দুই থেকে তিন মাস সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময়সীমা আরও বাড়ানো যেতে পারে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে। এ বিষয়ে নাইট্যাগ (ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ) বলছে ভবিষ্যতে তারা দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় আরও বাড়াতে বলতে পারে।

এ দিকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ইতোমধ্যেই যারা প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নিয়েছেন সেই সংখ্যার বিপরীতে বর্তমানে এই মুহূর্তে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ ডোজ ভ্যাকসিনের ঘাটতি রয়েছে। সময়মত ভ্যাকসিন না আসলে প্রথম ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৪ জন দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন পাবেন না।

ভ্যাকসিন সংকটের কারণে গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অধ্যাপক রোবেদ আমিন।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন