আইএসকের সঙ্গী হলো ১৪ ভারতীয়!

1510
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

আফগানিস্তানের কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট তথা আইএস। এই হামলায় প্রাণ গেছে ১৩ মার্কিন সেনাসহ অন্তত ১৭৫ জনের। এরই মধ্যে আবারও সৃষ্টি হয়েছে হামলার আশঙ্কা। এদিকে কাবুলে ১৪ ভারতীয় যোগ দিয়েছেন আইএসকের সঙ্গে।

২৮ আগস্ট এমন তথ্যই জানায় ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস। অনিশ্চিত একটি সূত্র আরও জানায়, তুর্কমেনিস্থান অ্যাম্বাসির সামনে দুই পাকিস্তানিকে তালেবানরা আইইডি ডিভাইসসহ আটক করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিমানবন্দরের ফটকে হামলা চালায় জঙ্গি সংগঠন আইএসকে, আইএসকে আফগানিস্তানে আরও হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এই জঙ্গি সংগঠনে নাম লেখান ১৪ জন ভারতীয় নাগরিক।

জানা যায়, ভারতের দক্ষিণের প্রদেশ কেরালার ১৪ জনের একজন ভারতে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যদিও বাকি ১৩ জন আইএসকের সঙ্গেই রয়েছেন কাবুলে। এর আগেও ২০১৪ সালে কেরালার বেশকিছু নাগরিক ‘কাফির’দের হাত থেকে রক্ষা পেতে দেশান্তর হয়েছিলেন। মালাপ্পুরাম, কাসারাগদ ও কান্নুরের বাসিন্দারা এই তালিকায় ছিলেন। শুধু তাই নয় আফগানিস্তানে আইএসকেপির সঙ্গে সারাজীবনের জন্য থাকতে পরিবারসহও অনেকে ভারত ছেড়েছেন।

এদিকে তালেবান নেতা শাহবুদ্দিন দেলওয়ার বলেছেন, আমরা দেশকে মসৃণভাবে চালাতে পারি কি না; সেই সক্ষমতা সম্পর্কে শীঘ্রই জানতে পারবে ভারত। আফগানিস্তানে নতুন তালেবান সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সন্দেহের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।

সপ্তাহখানেক আগে মোদি বলেন, সন্ত্রাসীনির্ভর সাম্রাজ্য কিছু সময়ের জন্য প্রাধান্য বিস্তার করলেও তা কখনোয়ই স্থায়ী হবে না। ২০ আগস্ট এক টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ক্ষমতাকে ধ্বংস করে তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য মানবতাকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) রেডিও পাকিস্তানের সঙ্গে আলাপকালে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে ভারতকে হুঁশিয়ারি করে দেন শাহবুদ্দিন দেলওয়ার।

তিনি বলেন, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ও বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ পাকিস্তান। ৩০ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এই তালেবান নেতা আরও বলেন, শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মানবকল্যাণে ভূমিকা রাখায় পাকিস্তানের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ওপর ভিত্তি করে সব দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে চায় তালেবান।

এদিকে তালেবানকে নিয়ে নিজেদের অবস্থান এখনো নির্ধারণ করেনি রাশিয়া। এখন আফগান জনগণ ও রুশ কূটনীতিকদের ক্ষেত্রে তাদের আচরণ কেমন হয়, তাও বিবেচনা করে দেখা হবে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) এমন দাবি করেছেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি ও স্থিতিশীলতায় মস্কো আগ্রহী। এ ছাড়া সেখানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে রাশিয়া আলোচনা চালিয়ে যাবে।

এ ছাড়া সামাজিকমাধ্যমে নিজেদের বিশেষ বাহিনীকে তুলে ধরেছেন তালেবান যোদ্ধারা। নতুন উর্দিতে বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের হাতে জব্দ করা আমেরিকান অস্ত্র দেখা গেছে। প্রচারের উদ্দেশ্যে ‘বাদরি ৩১৩’ নামের এই সামরিক ইউনিটের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।

তালেবান কীভাবে নিজেদের সামর্থ্যের ভেতর থেকে যোদ্ধাদের সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত করে, সামাজিকমাধ্যমের পোস্টে তা-ই দেখানো হয়েছে। সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে সেনাদের পরনে ছিল উর্দি, বুট ও বালাক্লাভা। বিশ্বজুড়ে বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা যে ধরনের পোশাক পরেন, তাদেরও সেভাবে দেখা গেছে।

‘বাদরি ৩১৩’ ইউনিট যোদ্ধাদের হাতে মার্কিন নির্মিত এম৪ অস্ত্র ছিল। জানেস ডিফেন্স কনসালটেন্সির ম্যাট হেনম্যান বলেন, তালেবানের সবচেয়ে প্রশিক্ষিত ও অস্ত্রে সজ্জিত যোদ্ধাদের সম্ভবত একটি ইউনিট হতে যাচ্ছে ‘বাদরি ৩১৩’। তাদের প্রচারের ক্ষেত্রে একটি চাঞ্চল্যের মাত্রা রয়েছে।

ক্যালিবার অবসকিউর ছদ্মনামের এক পশ্চিমা অস্ত্র বিশেষজ্ঞ বলেন, স্বাভাবিক তালেবানের চেয়ে তারা অনেক বেশি কার্যকর। এ ছাড়া সপ্তাহ দুয়েক আগে আফগান সরকারি বাহিনী যেমনটি ছিল, তার চেয়েও এই সামরিক ইউনিটের মান অনেক বেশি হবে।

এদিকে রুশ-নির্মিত বিভিন্ন কার্যক্ষমতার শতাধিক হেলিকপ্টার জব্দ করেছে তালেবান যোদ্ধারা। রুশ অস্ত্র রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বরাতে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এমন খবর দিয়েছে।

রক্ষণাবেক্ষণ ক্রু ও যন্ত্রাংশের অভাবে তারা এসব হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আফগান সামরিক বাহিনীর পতনের পর বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার ও বাহন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তার মধ্যে রুশ-নির্মিত অন্তত ১০০ মিআই-১৭ হিপ হেলিকপ্টার রয়েছে।

মার্কিন-নির্মিত ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হোকসের চেয়ে রাশিয়ার নির্মিত এসব সামরিক পরিবহন হেলিকপ্টারের সহজ ব্যবহারের জন্যই আফগান বাহিনীর জন্য তা ক্রয় করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় রপ্তানিকারক রোসোবোরোন এক্সপোর্টারের প্রধান আলেক্সান্ডার মিখিভ বলেন, এটি হেলিকপ্টারের একটি বড় বহর। বিভিন্ন ধরনের শতাধিক হেলিকপ্টার তালেবানের দখলে।

তিনি বলেন, হেলিকপ্টারের এই বহরের মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা দরকার। কারণ নানা কারণে হেলিকপ্টারগুলোর উড়াল সক্ষমতা নেই। এখন পর্যন্ত যে হিসাব মিলছে, তালেবানের কাছে রুশ-নির্মিত হেলিকপ্টারের সংখ্যা তার চেয়ে বেশিই হবে।

আফগান পুনর্গঠনবিষয়ক মার্কিন বিশেষ মহাপরিদর্শকের জুলাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগান সামরিক বাহিনীর কাছে ৫৬টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার রয়েছে। যার মধ্যে ৩২টি ব্যবহারযোগ্য।

রাশিয়ার এমআই-৮ হেলিকপ্টারের রপ্তানির জন্য নির্মিত সংস্করণ এমআই-১৭। দেশটির কাজান ও উলান-উডের দুটি প্ল্যান্টে এসব হেলিকপ্টার নির্মাণ করা হয়েছে।

তালেবানের হাতে থাকা রুশ হেলিকপ্টারের কতটির উড়াল সক্ষমতা আছে, তা এখনো পরিষ্কার হওয়া সম্ভব হয়নি। ২০০৫ সাল থেকে এমআই-১৭ হেলিকপ্টার ক্রয় করা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে ৫০টি তারা কিনেছে, আরও ৩০টি কেনার কথা ছিল।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন