হাতুড়ি-শাবল দিয়ে আশ্রয়নের ঘর ভাঙা হয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

1360
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ঘরের মধ্যে ৩০০ ঘরে কিছু সমস্যা হয়েছে, এটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন ছবি প্রচার করা হয়েছে যা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো, আমরা যখন সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমরা দেশের প্রত্যেকটা মানুষকে ঘর করে দেব। আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত জঘন্য চরিত্রের হঠাৎ দেখলাম কয়েকটা জায়গায় ঘর ভেঙে পড়ছে। কোথাও ভাঙা ছবি। সেসব দেখে পুরো ঘটনা সার্ভে করলাম কোথায় কী হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রায় দেড় লাখ ঘর বানিয়ে দিয়েছি। ৩০০ ঘর বিভিন্ন এলাকায় কিছু মানুষ নিজে থেকে গিয়ে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভেঙেছে এবং বিভিন্ন জায়গায় ছবি প্রকাশ করেছে। এদের নামধাম সবকিছু ইনকোয়ারি করে বের করা হয়েছে। আমার কাছে পুরো রিপোর্টটাই আছে। গরিবের জন্য করে দেওয়া ঘর যে এভাবে ভাঙতে পারে, সেই ছবিগুলো দেখলে সেটা দেখা যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, সব থেকে অবাক লাগে যে, মিডিয়াগুলো সেসব ধারণ করে আবার প্রচার করে। কিন্তু সেটা কীভাবে হলো, সেটা প্রচার করে না। কয়েকটা জায়গায় কোথাও কোথাও অতিবৃষ্টির কারণে ঘর ভেঙেছে। নয়টা জায়গায় আমরা পেয়েছিলাম যেখানে কিছু দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু আমি দেখেছি যে, প্রত্যেকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে।

বৈঠকে তিনি বলেন, ডিসি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ যাদের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তারা অনেকেই নিজে থেকে এগিয়ে এসেছেন সহযোগিতা করার জন্য। আন্তরিকতাই বেশি দেখিয়েছে সবাই সেখানে কিছু দুষ্টুবুদ্ধি। এটাই কষ্টকর যে, যখন গরিবের জন্য ঘর করে দিলাম, সেখানে হাত দেয় কী করে। যাই হোক, আমরা সেসব মোকাবিলা করে যাচ্ছি। আমাদের সেসব নিয়ে নেতাকর্মীদেরও সতর্ক থাকা দরকার। স্থানীয় নেতারাও সহযোগিতা করছে।

বৈঠকের কাজ শুরু করছি। সাংগঠনিক তথ্য কিছু নেব। আপনাদের কথাও শুনব। তা ছাড়া, আমি তো বন্দিখানায় বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

বৈঠক নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত চার মাস পরপর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে আমরা সময়মতো এটা করতে পারিনি। এখন করোনা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় বৈঠকটি করতে পারছি।

গতবার করোনার কারণে জাতিসংঘে যেতে পারিনি। তবে, এবার একটা যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সেখানে রওনা দেওয়ার আগেই বৈঠকে বসছি আপনাদের সঙ্গে। মনে রাখতে হবে, আমাদের সামনে নির্বাচন। সংগঠনটাকেও আমাদের গড়তে হবে।

তবে এবারের করোনাভাইরাসের সময়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর কোনো রাজনৈতিক দলকে এভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখিনি।

মূলত কেউ দাঁড়ায়নি। তাদের কোনো আগ্রহ ছিল না। তবে হ্যাঁ, টেলিভিশনে প্রতিদিন বক্তব্য বিবৃতি দেওয়া আর প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা ছাড়া আর কিছুই করেনি। তাদের ওই একটাই কাজ আওয়ামী লীগকে দোষারোপ করা। এসব ছাড়া তারা কিছুই করেনি।

দলের সবাই তো বটেই। সরকারের প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। তবে এটা কখনো একটা সরকারের পক্ষে এককভাবে এই রকম পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব না। আমাদের পক্ষে এটা সম্ভব হয়েছে একটাই কারণে, আমাদের একটা শক্তিশালী সংগঠন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আছে।

আর এটা আছে বলেই আমরা সম্ভব করতে পেরেছি, আমার বিশ্বাস। যেটা হলো বাস্তবতা এককভাবে শুধু সরকারি লোক দিয়ে সবকিছু সম্ভব হয় না। যদিও তারা সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে। প্রশাসন, পুলিশ, চিকিৎসক সবাই কাজ করেছে।

ভ্যাকসিন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর ভ্যাকসিনের কোনো সমস্যা হবে না। এখন থেকে নিয়মিত পাওয়া যাবে। মানুষের ঘরবন্দি সময়ে দলের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন।

আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই দেশের উন্নতি সম্ভব হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই করোনা মোকাবিলা সম্ভব হয়েছে। মানুষ সেবা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের জন্যই।

যারা আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা করে তাদের বলব, ৭৫ থেকে ৯৬ পর্যন্ত সময়ে দেশের কী অবস্থা ছিল, সেটা যেন তারা উপলব্ধি করে। আর কিছু ভাড়াটিয়া লোক তো আছেই, সারাক্ষণ মাইক লাগায়ে বলতেই থাকবে। সেটা যে যা বলে বলুক, আমাদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস আছে এবং সেই বিশ্বাস নিয়েই চলি।

জাতিসংঘের লক্ষ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ নিজেদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে যার সুফল দেশের মানুষ পাওয়া শুরু করেছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের এ সভা সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে চলে সোয়া ১২টা পর্যন্ত। এতে অর্ধশত নেতা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী নির্মিত বাড়িগুলোতে অনিয়মের চিত্র বছর না ঘুরতেই ফুটে উঠতে দেখা যায়। কোথাও মাটি সরে গেছে আবার কোথাওবা বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা আর কিছু বাড়ি ভেঙে পড়েও গেছে।

দেশের ২২ জেলার ৩৬ উপজেলায় এমন অভিযোগের দায়ে উপসচিব ও ইউএনও পর্যায়ের ৫ কর্মকর্তাকে ওএসডি করে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ও প্রকল্পের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তাদের দাবি, কোনো ছাড় নয়; যে কোনো মূল্যে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

গৃহহীনে গৃহদানের অনন্য নজির দেশে স্থাপিত হয়েছে চলতি বছরের শুরু থেকে। মুজিবশতবর্ষে উপহার হিসেবে সমাজের ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য এক চিলতে জমিতে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণের এ উদ্যোগ বিশ্বে এটিই প্রথম।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন