রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, নিরাপত্তায় কোনো ছাড় নয়

1250
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

পাবনার রূপপুর থেকে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ যেমন উৎপাদন হবে, তেমনি এটি হবে বিজ্ঞানের উৎকর্ষের স্বাক্ষর রাখতে যাওয়া অন্যতম গৌরবোজ্জ্বল স্থাপনা।

কেন্দ্রটি নির্মাণে নিরাপত্তার দিকগুলোকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যয় বাড়লেও এখানে কোনো ছাড় দেয়নি সরকার।
পাঁচ স্তরের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নিরাপত্তাবলয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো বটেই ৮ মাত্রার ভূমিকম্প এমনকি বিমান হামলাতেও টিকে থাকবে এই অত্যাধুনিক প্ল্যান্ট। এদিকে, কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের পারমাণবিক চুল্লি বা রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে আজ-রোববার (১০ অক্টোবর)। আর চুল্লি স্থাপন কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন তেল-কয়লা বা গ্যাস থেকে সরে এসে বাংলাদেশে পরমাণুর সূক্ষ্ম প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাযজ্ঞ শুরুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে একমাত্র এ প্রকল্পটি।

এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই প্রয়োজন দূরদর্শী ও বিজ্ঞানসম্মত সিদ্ধান্ত। প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকা পরমাণু প্রযুক্তির আধুনিক সংস্করণ অর্থাৎ তৃতীয় প্রজন্মের চুল্লি বা রিঅ্যাক্টর বসানো হচ্ছে রূপপুরে। এতে থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা।

নির্মাতারা বলছেন, নিরাপত্তার সব দিক নিশ্চিত করেই প্ল্যান্টের নকশা হয়েছে। এখানে ব্যবহৃত অন্যতম যান্ত্রিক সংযোজন ১২টি হাইড্রোঅ্যাকোমডেটর নিশ্চিত করবে কোনো দুর্বিপাকে প্ল্যান্টের নিজে থেকে চালু থাকার ক্ষমতা।

নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থা পরিচালক ড. শৌকত আকবর বলেন, যতগুলো অক্সিডেন্ট-ইনসিডেন্ট ঘটেছে অন্য অন্য দেশে সবগুলো মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। আমরা এখন বলছি, বর্তমানে আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। মানে বর্তমান ধরে। যেসব মেশিন যোগ করা হয়েছে কখনও যদি স্টেশন ব্লাকআউট হয়ে যায়, তাহলে ৭২ ঘণ্টা বাইরের কোনো সাহায্য ছাড়া শুধু পানিপ্রবাহ ছাড়া চলার সক্ষমতা রয়েছে।

নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের ফিশন প্রক্রিয়া থেকে উৎপাদিত তেজস্ক্রিয় বর্জ্য যাতে বাইরে না আসে, সে জন্য প্ল্যান্টটির রিঅ্যাক্টর ভবনের অভ্যন্তরেই স্পেন্ট ফুয়েল রাখার ব্যবস্থা থাকছে বলেও আশ্বস্ত করছেন এ পরমাণু প্রকৌশলী।

এত সব নিরাপত্তাব্যবস্থার বন্দোবস্ত করতে গিয়ে খরচ কিছুটা বাড়লেও বাংলাদেশ তাতে কার্পণ্য করেনি বলে দাবি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের।

তিনি বলেন, দেখুন এটি নিয়ে আমরা খুব বেশি কথা বলি না কারণ সারা পৃথিবীতে এ ধরনের প্রজেক্ট নিয়ে পাবলিক করা হয় না, অনেক কিছুই। আমরা দেশের মানুষকে বলব, আমরা ন্যায়নীতি মেনে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কিন্তু আমরা এ কাজটি করছি। নিরাপত্তাটাই হলো এ প্রকল্পের মূল দিক, যেটা দেখতে হয়। আমরা বলেছি ব্যবহার হোক বা না হোক আমাদের দেশের মানুষের যেন সামান্য ক্ষতি হোক সেটা হতে আমরা দেব না। যদি অতিরিক্ত টাকাও খরচ করতে হয় সেটা দিতে রাজি আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মাটির নিচে ও ওপরে মিলে রূপপুরে যেসব প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হচ্ছে তাতে করে অন্তত শত বছর নিরাপদেই চলমান থাকবে প্ল্যান্টটি, বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন