মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে জাতি-গোত্র-পেশার পরিচয় মুখ্য ছিল না। হতে হয়নি বিশেষ কোনো ধর্মেরও। একাত্তরে ব্যক্তি পরিচয়ের চেয়ে সমষ্টির মুক্তির স্বপ্ন এক করেছে মানুষকে। কিন্তু এই গৌরবের আলোর নিচে রামু, নাসিরনগর, শাল্লা কিংবা সবশেষ কুমিল্লা-নোয়াখালীর সাম্প্রদায়িক হামলা। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হতাশ, ক্ষুব্ধ রাজনীতি-সমাজে সুক্ষ পরিবর্তনের দিকে খেয়াল রাখা বিশিষ্টজনরা।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বেশিরভাগ মানুষই মনস্তত্ত্বের দিকে দিয়ে সাম্প্রদায়িক। ১৯৭১ সালে এটি চাপা পড়েছিল। তারপর এটি আস্তে আস্তে উজ্জীবিত হচ্ছে। ১৯৭৫ এর পরে এটি আরও বেগবান হয়েছে।
বাংলাদেশ মুক্তির স্বপ্ন দেখা মানুষদের হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আজকে শুধু হিন্দু জনগোষ্ঠী না, আজকে যারা শুভ বুদ্ধির মানুষ, আজকে যারা অসম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিল, প্রত্যেকে আজকে শঙ্কিত, উদ্বিগ্ন, লজ্জিত।
স্বাধীন দেশে বিশেষত ১৯৭৫ পর থেকে এমন কোনো বছর খুঁজে পাওয়া মুশকিল যে বছর ধর্মীয়, জাতিগত পরিচয়ে হামলায় মানুষের কান্না ঝরেনি। এতে করে সংখ্যায় কম থাকা মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার যে নৈতিক দায়িত্ব, তা পালনে একরকম ব্যর্থ হয়েছে সংখ্যায় বেশি থাকা মানুষ।
অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ৬০-৭০ এর দশকে আমরা দেখেছি শত শত মানুষ ঘটনা ঘটাবার জন্য নয়, ঘটনা বন্ধ করার জন্যে ঝাপিয়ে পড়েছে। সেটা না হয়ে এখন উল্টো ঘটনা ঘটছে। তার অর্থ হচ্ছে যারা এই সমাজটাকে বদলাবার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, যারা জনগণের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তারা সেই কাজে নিজেদেরকে যোগ্য করে তুলতে পারেনি।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ক্ষমতাসীন দল হোক আর বিরোধী দল, সব রাজনৈতিক দলই সাম্প্রদায়িক। আর এর বাইরে কিছু দল আছে যেমন জামায়াতে ইসলামী, হেফাজত এরা হচ্ছে মৌলবাদী দল। আমি মনে করি তাদের চেতনাটা আলাদা, গুলিয়ে ফেলা যাবে না। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি হচ্ছে ভোটের জন্য, রাজনীতির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে কিন্তু মুখে বাগাড়ম্বর করে অনেক বেশি।
বৈষম্যের অবসান হতে হবে পাহাড়-সমতল সবখানে। আর রাষ্ট্রকে যদি আসলেই অসাম্প্রদায়িক রাখতে হয়, সংখ্যালঘু হামলার তদন্ত-বিচার-শাস্তিকে পাশ কাটিয়ে তা কিছুতেই সম্ভব নয় বলেই মত বিশিষ্টজনদের। তাদের মতে, ঘটনার সঠিক তদন্ত ও জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা এগিয়ে নিতে পারে কিছুটা সমাধান।