‘স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের রূপরেখা’ ভুলে গেছে সব দল

1024
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনের ঠিক আগে আগে পরবর্তী সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করেছিল তিন জোট। কিন্তু নব্বইয়ের এই রূপরেখা কফিনবদ্ধ হতে শুরু করে একানব্বইয়ের নির্বাচন থেকেই। তিনদশক পরে এখন সব দলই বেমালুম ভুলে গেছে এই রূপরেখার কথা। কারও দলের রাজনৈতিক এজেন্ডাতেই নেই নব্বইয়ের সেই রূপরেখা।

১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর । স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের তখন চূড়ান্ত পর্যায় চলছে। এরশাদ পরবর্তী সরকার ব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে এদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দল, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দল এবং বামপন্থীদের ৫ দল মিলে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে।

এই রূপরেখার মূল দিকগুলো ছিল- তিন জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা এবং অপর দলের দেশপ্রেম ও ধর্মবিশ্বাস সম্পর্কে কটাক্ষ করা থেকে বিরত থাকবে। জোটভুক্ত কোন দল সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দিবে না এবং সাম্প্রদায়িক প্রচারণা সমবেতভাবে প্রতিরোধ করবে।

নির্বাচনী কার্যক্রমে সংঘাত পরিহার, এরশাদের স্বৈরাচারী সরকারের চিহ্নিত সহযোগীদের জোটভুক্ত কোন দলে স্থান না দেয়ার বিষয়ে অঙ্গীকার কঠোরভাবে পালন করবে।

সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাজনীতি করবে সকল দল। যেহেতু দেশের সব গণতান্ত্রিক দল মিলে এই রূপরেখা প্রণয়ন করেছিল, সেই হিসেবে এটিকে জাতীয় সনদ বলাই যায়।

এই রূপরেখা প্রণয়নের দুই সপ্তাহের মধ্যে সামরিক একনায়ক এরশাদের পতন ঘটে। এর কিছুদিন পর থেকেই ওই রুপরেখা কফিনবদ্ধ হতে শুরু করে। আর সেই কফিনে প্রথম পেরেকটি ঠুকে বিএনপি। ৯১ এর নির্বাচনে তারা সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের কালো তালিকাভুক্ত এরশাদ সরকারের চিহ্নিত দুই সহোযোগী এমকে আনোয়ার এবং কেরামত আলীকে মনোনয়নে দেয়। একই নির্বাচনে তারা নির্বাচনী শ্লোগানে ধর্মের ব্যবহার শুরু করে এই কফিনে দ্বিতীয় পেরেক ঠুকে। আর সবচেয়ে বড় পেরেকটি ঠুকে দেয় জামাতের সঙ্গে জোট বেঁধে সরকার গঠন করে। যদিও তাদের সুযোগ ছিল বামদের নিয়ে সরকার গঠনের।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, তিনদলীয় জোটে রুপরেখা বাস্তবায়ন করার ব্যর্থতা সব দলের।

নব্বইয়ের রূপরেখার কফিনে পেরেক ঠুকেছে আওয়ামী লীগও। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ঘিরে এই রূপরেখা তৈরি
হলেও তারা ১৯৯৬ এর নির্বাচনের পর সরকার গঠনে জোট বাঁধে এরশাদের জাতীয় পার্টির সঙ্গেই।

আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, রাজনীতিতে চিরবৈরিতা বলে কোন কথা নেই। তাই অন্য দলগুলোকে মোকাবেলায় তিনজোটের রুপরেখা মানা হয়নি।

বড় দুই দল ক্ষমতার রাজনীতিতে আপোষ করে নব্বইয়ের রূপরেখা কফিনবদ্ধ করলেও দায় এড়াতে পারেনা বামদলগুলোও। তারা এই স্খলনগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত কোন প্রতিবাদও করতে পারেনি।

বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ভুল সিদ্ধান্তই তিন জোটের রুপরেখা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

অসাধারণ একটি রূপরেখা প্রণয়ণের তিন দশক পর দেখা যায় তিনজোটের অনেকেই মনে রাখেনি ওই রুপরেখায় কী কী ছিল। আর বর্তমান প্রজন্ম জানেই না একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাস্ট্র গঠনে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন