দুই চুলা ১০৫ আর এক চুলার জন্য ৬৫ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ

1012
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

গ্যাস দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির তৃতীয় দিনেও বিইআরসি কারগরি কমিটি দুই চুলার জন্য ১০৫ টাকা আর এক চুলার জন্য ৬৫ টাকা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। অর্থ্যাৎ এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকা আর দুই চুলার জন্য ১ হাজার ৮০ টাকা করা যেতে পারে বলে মতামত দেয় কারিগরি কমিটি।
খুচরা পর্যায়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর রাজধানীর ইস্কাটনের বিয়াম মিলনায়তনে সকাল ১০ টায় তৃতীয় দিনের মতও গণশুনানি শুরু হয়। শুরুতেই বিইআরসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জানান, কোভিড পরিস্থিতি ও বর্তমান বৈশ্বিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে যে ব্যবসা বাণিজ্যের মন্দা অবস্থা তা প্রস্তাব নিয়ে আসা কোম্পানিগুলো তুলে আনে নি। গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে তার প্রভাব কি পড়বে তার কোন চিত্র নেই প্রস্তাবনায়। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত দেয়ার কথা জানান বিইআরসি চেয়ারম্যান। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৪৫ পয়সা ৯ টাকা ৬৬ পয়সা, ক্যাপটিভে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে ৩০ টাকা ১ পয়সা, শিল্প ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২৩ টাকা ২৪ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি ।

শুনানিতে বিইআরসির দাম বাড়ানোর সুপারিশের তীব্র বিরোধিতা করেছে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা এই সংগঠন বলছে, সরকারি কোম্পানি পরিচালনার জন্য রাজস্ব চাহিদার বেশি টাকা দেওয়ার সুযোগ নেই।

গত জানুয়ারিতে দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গড়ে ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। এতে এক চুলায় দুই হাজার ও দুই চুলায় ২ হাজার ১০০ টাকা করার দাবি করেছিল তারা।

গতকালের শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১১৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। দুর্বল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে না। সবার আগে জনগণ।

কারিগরি কমিটির সুপারিশে বাসার ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম প্রায় ৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এতে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করা গ্রাহকদের গ্যাসের বিল বেড়ে যাবে। বর্তমানে মাসে ৫০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করা একজন গ্রাহক ৬৩০ টাকা দিলেও নতুন দামে তাদের খরচ পড়বে ৯০০ টাকা। আর দুই চুলায় একজন গ্রাহকের কাছ থেকে আগে মাসে ৭৭ ঘনমিটার গ্যাসের বিল নেওয়া হলেও এবার তারা ৬০ ঘনমিটার ধরে হিসাব করেছে। দুই ধরনের গ্রাহকের মধ্যে বৈষম্য কমাতে এটি করা হয়েছে বলে জানায় কারিগরি কমিটি।
গ্যাসের দাম বাড়াতে সরকারি ভর্তুকি আগের চেয়ে কম ধরে এবার হিসাব করেছে বিইআরসির কারিগরি কমিটি। বর্তমানে প্রতি ইউনিটের জন্য সরকারের ২ টাকা ৪৯ পয়সা ভর্তুকি ধরা আছে। এ ছাড়া জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল থেকে প্রতি ইউনিটে ৪১ পয়সা করে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। সুপারিশ করা দামে সরকারের জন্য ২ টাকা ২৭ পয়সা ভর্তুকি হিসাব করেছে কারিগরি কমিটি। এতে ভোক্তার কাছ থেকে গড়ে প্রতি ইউনিটে বাড়তি নেওয়া হবে ১ টাকা ৯৪ পয়সা।

ভর্তুকি কমানোর তীব্র সমালোচনা করে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, ভর্তুকি আগের মতো রাখা হলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় তা কম হতো। এখন করোনা পরিস্থিতিতে ভোক্তার ওপর আরও চাপ তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার কোম্পানি থেকে ভ্যাট, কর, লভ্যাংশ ও উদ্বৃত্ত টাকা নিচ্ছে। এ অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা সরকারের দেওয়ার কথা। এটি ভোক্তার ওপর চাপানো হচ্ছে কেন? বিশ্বের কেউ এটাকে বাণিজ্য বলবে না, লুটপাট বলবে।

শুনানিতে আরও উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মকবুল ই ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু ফারুক, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান।

ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তাদের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ রেখে এবার গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে।

বিইআরসির কারিগরি কমিটিও এসব প্রকল্প বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করেছে। অন্যদিকে ক্যাব শুনানিতে বলেছে, ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানির আকার ও পরিচালন খরচ এক নয়। তাহলে সবার জন্য একই চার্জ (সেবার জন্য নেওয়া বিল) কেন রাখা হচ্ছে? মুনাফায় থাকা এসব কোম্পানির চার্জ কমানোরও দাবি জানিয়েছে ক্যাব।

গতকাল শুনানি শেষে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, সংকটময় পরিস্থিতি এখন। এ সময় ভোক্তার ওপর চাপ তৈরি না করে সবারই বিকল্প ভাবা উচিত।

এদিকে সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস ও বাখরাবাদের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর আজ বুধবার শুনানি হবে। সব শুনানি শেষে আগামী তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত রায় জানাবে বিইআরসি।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন