মাকে দেখে যা বললেন মরিয়ম মান্নান

822
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

খুলনা নগরের দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা এলাকা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগমকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) ফরিদপুরের বোয়ালমারী থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকালে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে দূর থেকে মাকে দেখেছেন মরিয়ম মান্নান।

মরিয়ম মান্নান জানান, আমি মাকে চোখে দেখেছি, দূর থেকে মাকে দেখেছি। আমার কলিজা ঠাণ্ডা হয়েছে। কাছে থেকে দেখি নাই। আমি আমার মায়ের কাছে যেতে চাই। আমি আমার মায়ের সাথে কথা বলতে চাই। কে কি বলল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার চাওয়া ছিল আমার মা। আমি দেখেছি আমার মাকে।

তিনি আরও বলেন ২৭ দিন ধরে আমার মা নিখোঁজ। ময়মনসিংহে একটা লাশ পাওয়া গেছে। আমি সেখানে গিয়েছি সেটা আমার জন্য কি অন্যায়। এটা আমার মাকে খোঁজার একটা অংশ, যে আমি ফুলপুরে গিয়েছি। আমি প্রত্যেকটা যায়গায় গিয়েছি মাকে খুঁজতে।

এ সময় পরে অপহরণ ও লাশ উদ্ধার সংক্রান্ত নাটক করার অভিযোগ অস্বীকার করেন মরিয়ম মান্নান।

দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে শনিবার (সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এরপর রাত ২টার দিকে তাকে নিয়ে আসা হয় দৌলতপুর থানায়।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (নর্থ) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন যে, রহিমা বেগম ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে রয়েছেন। আরও খোঁজ নিয়ে তারা বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপর দৌলতপুর জোনের এডিসি আবদুর রহমান ও দৌলতপুর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম রাত পৌনে ১১টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছায়। পুলিশের টিম দেখে যে, রহিমা ওই বাড়িতে বসে দুইজন নারীর সঙ্গে গল্প করছেন।

পুলিশের টিম রহিমা বেগমকে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও রহিমা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। তবে ওই বাড়ির বাসিন্দারা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, রহিমা তাদেরকে জানিয়েছেন তিনি বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও মোকসেদপুরে ছিলেন। এরপর ১৭ আগস্ট বোয়ালমারীতে কুদ্দুসের বাড়িতে যান। তখন তার একটি ব্যাগে দুই প্যাকেট বিস্কুট, কিছু কাগজপত্র ও পরনের কয়েকটি কাপড় ছিল।

বেশ কয়েক বছর আগে কুদ্দুস খুলনার সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন। তখন রহিমা বেগমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পরে তিনি বোয়ালমারীতের চলে যান। বেশ কিছুদিন আগে রহিমার ছেলে একবার কুদ্দুসের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল।

ডেপুটি কমিশনার জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তারা রহিমা বেগমকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। রহিমা বেগম কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। সে কারণে ট্রাকিং করা সম্ভব হয়নি। রহিমা অপহরণ মামলাটির তদন্ত দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে পিবিআইতে গেছে। তারপরও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ মামলাটির ছায়া তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল। পিবিআই তদন্ত করে দেখবে রহিমা বেগম কীভাবে নিখোঁজ হয়েছিল এবং কোথায় কোথায় ছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কুদ্দুসের ছেলে আলামিন, কুদ্দুসের স্ত্রী ও ভাইয়ের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে। তিনি কি আসলেই অপহরণ হয়েছিলেন নাকি স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন-এমন প্রশ্নের উত্তরে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার বলেন, এটা পিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের মাধ্যমে বিস্তারিত উদঘাটন করে জানাবে।

এদিকে ময়মনসিংহের ফুলপুর থানা এলাকায় উদ্ধার হওয়া এক নারীর মরদেহ তার মা রহিমা বেগমের বলে ২২ আগস্ট ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয় তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। পরদিন ফুলপুর থানায় গিয়ে তিনি ছবি দেখে ও নিহতের পায়জামা দেখে ওই লাশ তার মায়ের বলে দাবি করেন মরিয়ম। তিনি লাশের ডিএনএর সঙ্গে তার ডিএনএ মিলিয়ে দেখারও আবেদন করেন।

এদিকে, শনিবার মধ্যরাতে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, মাকে উদ্ধারের খবর পেয়েছি। আমার থেকে খুশি এই মুহুর্তে কেউ নেই। আমি এই মুহুর্তে খুলনা যাচ্ছি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দৌলতপুর থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে রহিমা ও তার মেয়েরা অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। তিনি মূলত স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। রহিমা বেগমের সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কিনা-এ প্রশ্নের উত্তরে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, মামলাটি যেহেতু পিবিআই তদন্ত করছে, ফলে বাকি কাজ তারাই করবে।

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আত্মগোপন!

জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা বেগম। বিষয়টি জানতেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া ২২ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে মায়ের লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন রহিমার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। এমন অভিযোগ রহিমাকে অপহরণ মামলায় আটক ৬ জনের পরিবারের সদস্যদের।

রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় ছুটে যান এ মামলায় আটক রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তার ছোট ছেলে রফিকুল আলম পলাশ চাকরি করে এবং বড় ছেলে নুরুল আলম জুয়েল মুদি দোকানী। তার দুই ছেলেকে রহিমাকে কথিত অপহরণের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ থাকায় মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে। রহিমা ও তার সন্তানরা কেন এই অপহরণের নাটক সাজালো সে ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, রহিমার মেয়ে মরিয়ম শুক্রবার ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় বসে দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম সম্পর্কে অনেক আপত্তিকর কথা বলেছে।

এ মামলায় আটক মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, রহিমা বেগমের তিন বিয়ে। মেয়ের ঘটকালি করতে আসে বেলাল, সর্বশেষ রহিমা বেগম তাকে বিয়ে করেন। তিনি বলেন, তার ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া রহিমার সৎ ছেলের কাছ থেকে জমি কেনে। সেই জমিতে যাতে যেতে না পারে সেজন্য আত্মগোপন করে অপহরণ মামলা দিয়ে তাকে আটক করিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মরিয়ম মান্নান নাটকবাজ। পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছে। সে মাদকাসক্ত, তার একাধিক বয়ফ্রেন্ড আছে। ময়মনসিংহে গিয়েও মরিয়ম নাটক সাজায়। তিনি আটককৃতদের মুক্তি এবং রহিমা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তির দাবি করেন।

এ মামলায় আটক হেলাল শরীফের মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী আন্তারা ফাহমিদা বলেন, তার বাবা কোনো অপরাধ করেনি, অথচ তারপরও তাকে জেল খাটতে হচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা নানা কটূক্তির শিকার হয়েছে।

এ ব্যাপারে রহিমা বেগমের বড় ছেলে মোহাম্মদ সাদী বলেন, তার মা উদ্ধার হওয়ায় তারা খুশি। তার কোনো বোন অপহরণ নাটক সাজিয়েছে বলে তার কাছে মনে হয় না। তারপরও তার মাকে জিজ্ঞাসা করা হোক, যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে যে তারা অপহরণ নাটক সাজিয়েছে তাহলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হোক।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে রহস্যজনক নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। তাকে অপহরণ করার অভিযোগ তুলে পরদিন থানায় মামলা করেন রহিমার মেয়ে আদুরি আক্তার।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন