
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ঋণগ্রহণ সীমা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনায় কোনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং হাউজ স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি।
মার্কিন কোষাগারে আর মাত্র ১০ দিনের সরকারি ব্যয় মেটানোর অর্থ রয়েছে। ফলে এই সময়ের মধ্যে বর্তমান ঋণ গ্রহণের সীমা ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে না বাড়ানো হলে দেশটির কোষাগার শূন্য হয়ে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
সোমবার সন্ধ্যার বৈঠকের পরে উভয় পক্ষই( ডেমোক্রেট-রিপাবলিকান) দেউলিয়া এড়ানোর প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তারা আগামী দিনে এ বিষয়ে নিয়মিত কথা চালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং রিপাবলিকান শীর্ষ নেতারা একটি চুক্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি ফেডারেল বাজেটে ব্যয় কমানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিতে হোয়াইট হাউসকে চাপ দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এটাকে ‘চরম’ বলে অ্যাখ্যা দিয়ে নতুন করের উপর জোর দেন। কিন্তু রিপাবলিকানরা তা প্রত্যাখ্যান করে।
এদিকে বৈঠক শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘দেউলিয়া প্রতিরোধ ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে স্পিকার ম্যাকার্থির সাথে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক শেষ করেছি। আমরা আবারও পুনরাবৃত্তি করছি যে, দেউলিয়া এখনো টেবিলের বাইরে রয়েছে এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তির দিকে সরল বিশ্বাসে এগিয়ে যাওয়ায় একমাত্র উপায়। যদিও আমাদের মধ্যে অনেক বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। স্পিকার ও তার প্রধান সমন্বয়ক চেয়ারম্যান ম্যাকহেনরি, কংগ্রেসম্যান গ্রেভস এবং আমাদের কর্মীরা আলোচনা চালিয়ে যাবেন।’
এদিকে মার্কিন অর্থমন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন জুনের শুরুতেই খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে পরতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার পাশাপাশি বিশ্ব অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে বলে মত বিশ্লেষকদের।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন সতর্ক করে বলেন, মার্কিন কোষাগারে আর মাত্র ১০ দিনের সরকারি ব্যয় মেটানোর অর্থ রয়েছে। ঋণ গ্রহণ সীমা ৩১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে না বাড়ানো হলে দেশটির কোষাগার শূন্য হয়ে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র।
এরইমধ্যে রোববার ঋণ গ্রহণ সীমা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনায় বসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং হাউজ স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি। কিন্তু কোন সমাধান ছাড়াই শেষ হয় তাদের আলোচনা।
তবে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলেও এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব বলে বিশ্বাস করেন ম্যাকার্থি। অন্যদিকে বাইডেন বলেন, সরকারের খেলাপি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আর নেই।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন সরকার যে চরম অচলাবস্থার মধ্যে আটকে আছে, তা শুধু তাদের জন্য নয়, বরং বিশ্ব অর্থনীতির জন্যও মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করেছে। মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি ব্যয় মেটাতে ব্যর্থ হলে ভয়াবহ ধস নামবে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে । সেইসাথে সুদহার বাড়বে। অনেক ছোট ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যাবে। বাড়বে দেশটির জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে নেতিবাচকভাবে প্রভাব পড়বে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র দেউলিয়া হলে ডলারের ওপর নির্ভরশীল বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করবে। কমতে পারে ডলারের আধিপত্য। দেশটির ঋণ গ্রহণ সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি, ঋণদাতাদের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হবে।