রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনের উপায় নির্বাচন

135
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনের একমাত্র উপায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন। নূন্যতম সংস্কার করে ত্রোয়দশ জাতীয় নির্বাচনের পথে হাটা ছাড়া সরকারের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাজনীতিবিদরা। তারা মনে করেন, দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করছেন এমন প্রশ্ন উঠবে কেন? জনগণের যে আকাঙ্খা তা তিনি বুঝতে ব্যার্থ হয়েছেন। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে কাজ, সেটি তিনি না করে মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে নিজস্ব পারপার্স সার্ফ করতে চাইছেন। একই সঙ্গে সরকারের নির্দেশনায় গঠিত এনসিপির হুমকি-ধমকি, মব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণেই দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ থেকে উত্তরণের একটি মাত্র পথ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার জাতীয় নির্বাচন। অর্থাৎ নূন্যতম সংস্কার করে ত্রোয়দশ জাতীয় নির্বাচনের পথে হাটা ছাড়া সরকারের কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দীর্ঘক্ষণ উপদেষ্টাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে ঢাকায় প্রতিদিন সড়ক আটকে আন্দোলন, সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোদের মধ্যে ঐকমত্য না হওয়া, রাষ্ট্রীয় কাজে নানা পক্ষের অসহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় আসে। আলোচনার এক পর্যায়ে কাজ করতে না পারার পদত্যাগের বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়েও এখনো তেমন কিছু হলো না। তাহলে তিনি কেন থাকবেন এমন প্রশ্নও আলোচনায় আনেন তিনি। একপর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা যেন আরেকটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। কারণ, তিনি চলে যেতে চান। বর্তমানে যে পরিস্থিতি আছে তাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে ব্যালট ছিনতাইয়ে মতো ঘটনা ঘটলে পুলিশ–প্রশাসন তা ঠেকাতে পারবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, উত্তেজনা, অনিশ্চয়তা এবং আশংকার মধ্যে কাটছে সময়। দেশের রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন বা খোঁজ রাখেন তাদের কপালে চিন্তার রেখা ক্রমশ গভীর হচ্ছে। দুটো প্রশ্ন ঘুরে ফিরে আসছে বারবার। কি হচ্ছে দেশে ? এরপর কি হবে? প্রশ্ন দুটো ছোট কিন্তু উত্তর ছোটোও নয়, সহজ তো নয়ই। গত কয়েকদিন ধরে নানাধরনের উত্তেজনাপুর্ন ঘটনা, পদক্ষেপ ও মন্তব্যের পর গত ২২ মে দাবানলের মত খবর ছড়িয়ে পড়ে অন্তরবর্তিকালিন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইউনুস পদত্যাগের কথা ভাবছেন। তৎপর হয়ে হয়ে উঠে রাজনৈতিক, কুটনৈতিক মহল, যারা বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন এই সরকারকে কিংবা বিরোধিতা করছেন সরকারের তারাও নড়েচড়ে উঠেন। ফলে এই রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে একমাত্র পথ ত্রোয়দশ জাতীয় নির্বাচনের পথে হাটা। সেটি সরকার না করলে ভবিষ্যতে এই সংকট আরও বাড়বে। দৌড়ঝাঁপ শুরু হয় ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে, অনেকে ছুটে যান যমুনায়, ফেসবুকে মুখর হয়ে উঠেন অনেকে আর রাষ্ট্রের ও রাজনীতিতে গুরুত্বপুর্ন অনেক ব্যক্তি ঐক্যের আহবান, ধৈর্যের আকুতি আর বিভাজন দূর করার অঙ্গীকার করেছেন। গভীর রাতে প্রেস সচিবের ফেসবুক স্ট্যাটাস আর এক নতুন সংশয় সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সংশয় তো সমাধান নয় মানুষ জানতে চায়, এই যে অনিশ্চয়তা এর সমাপ্তি কোথায় এবং কোন পথে?  ফলে এই
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান সহোযোগী অধ্যাপক ড. সাবের আহমেদ চৌধুরী সময়ের আলোকে বলেন, আমরা সম্প্রতি লক্ষ্য করলাম সেনাপ্রধান তিনি দৃঢ়ভাবে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। ‌ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা মুখ্য। সেনাবাহিনীর সাপোর্ট ছাড়া সরকার স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবে না। গত বছরের ৫ আগস্ট পরবর্তী আমরা যেসব ঘটনাগুলো লক্ষ করলাম, সেখানে কিন্তু সেনাবাহিনী একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর কতিপয় ছাত্র নেতৃত্ব তারা পুরো বিপ্লবের ভূমিকা নিয়ে নিয়েছেন। ‌ তারা নিজেরাই বলেছেন, এই অভ্যুত্থান তারা ঘটিয়েছেন। তারা যদি হুমকি-ধমকি না দিয়ে বা মব বা সন্ত্রাস সৃষ্টি না করে নিজেদের সম্মান নিয়ে থাকতো সেটি দেশের জন্য মঙ্গল হতো। কিন্তু তারা সারা দেশব্যাপী মব ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর কারণেই দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি অন্তবর্তী কালীন সরকারের উদ্যোগে মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, এটি রাজনৈতিক অস্থিরতার মূল কারণ। এই মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর প্রশ্নে জনগণ ও সেনাবাহিনী এক কাতারে চলে এসেছে। কারণ মানবিক করিডোর বা চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র অন্তবর্তী কালীন সরকার করছে, সেটির বিপক্ষে সেনাবাহিনী দাঁড়িয়েছে। যে চাওয়া জনগণের। মূলত সরকার এই করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের পারপাস সার্ফ করতে চেয়েছিল। সরকার বুঝতে ভুল করেছে দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। সেনাবাহিনী সেটি বলেছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা যেটি লক্ষ্য করেছি, সরকার নেতৃত্বে যে দলটি গঠিত হয়েছে পুরো দায়িত্ব তারা নিতে চাইছে। বর্তমান উপদেষ্টারা নির্বাচন ইস্যুতে টালবাহানা শুরু করেছে। তারা সেনাবাহিনী ও জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও সেনাবাহিনীকে অন্ধকারে রেখে সরকার কোন কিছুই করতে পারবে না। এখন উচিত হবে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেসব কাজগুলো করা দরকার সেদিকে এগিয়ে যাওয়া।  সরকার শৃঙ্খলা ফেরাতে পুরোপুরি ব্যর্থ। তাদের কথা কেউ শুনছে না। জনগণের নিরাপত্তা আজকে প্রশ্নের সম্মুখীন। তাই ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন হওয়া উচিত। জনগণ ও সেনাবাহিনীকে সন্দেহ চোখে রেখে ভালো কিছু করা আদৌ সম্ভব নয়। সেটির অন্তবর্তী কালীন সরকার বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, সরকার নিজেই এ সংকটটা তৈরি করেছে। সরকার নানান ক্রাইটেরিয়ায় নিজের পরিচিত লোকজনকে ক্ষমতা কাঠামোতে পদায়ন করেছে। এভাবে একটা অভ্যুত্থানের পর ব্যক্তিগত পরিচয়ের মধ্য দিয়ে সরকার তৈরি হলে, সেই সরকার সফল হতে পারবে না। কারণ এ সরকারের কোনো আদর্শ নেই, সরকারে যারা আছে সবার একই আদর্শ না, একেক জনের একেকটা অ্যাজেন্ডা আছে। অর্থাৎ সরকারের নিজের মধ্যেই ঐক্য নেই। যে কারণেই সমস্যাগুলো হচ্ছে। সরকার অসংখ্য দাবি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে, যেগুলো তার করার কথা না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ ছিল একটা সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। একই সঙ্গে নির্বাচিত সরকার থেকে যেন কোনো সরকার কোনদিন স্বৈরাচার না হয়ে উঠে সেই সংস্কার করা। সীমিত স্বপ্নের মধ্যে যদি সে থাকতো তাহলে সরকারের প্রতি সবার গ্রহণযোগ্যতা শুরুতে যেমন ছিল এখনো থাকত। কিন্তু সরকার নানান বিষয় নিজেকে সংশ্লিষ্ট করে ফেলেছে, কাকে মেয়র বানাবে কাকে বানাবে না। এসব বিষয় সরকারের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন ছিল না।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বোঝাপড়ায় আনতে হবে। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছে না, সে ভাবছে সে নিজেই মূল অংশীজন। কিন্তু এ সরকারের পেছনে তো কোনো শক্তিশালী নেটওয়ার্ক নেই, কোনো রাজনৈতিক দল নেই। এই সরকার দূর্বল হবে না ততক্ষণ, যতক্ষণ রাজনৈতিক দলগুলো তাকে সমর্থন করবে।  সুতরাং তাকে ঘনঘন দলগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হবে তাহলেই ভুল বোঝাবুঝি গুলো দূর হয়ে যাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন সময়ের আলোকে বলেন, নির্বাচন ছাড়াও সর্বশেষ আমার কাছে মনে হয়েছে করিডোর প্রশ্নে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের অনৈক্যও সরকারকে এক ধরনের শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যার ফলে সরকার প্রধান পদত্যাগের মধ্যে সিদ্ধান্ত চলে গিয়েছে। দেশের ভিতরে সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিকভাবেও সরকার এখন তেমন সমর্থন পাচ্ছে না বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে। বিএনপি খুব স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন চাইছে। তবে আমার কাছে মনে হয়, সরকারের ভেতরের বিভিন্ন শক্তি রয়েছে যারা নির্বাচন চায় না। সবকিছু মিলিয়ে এই সংকট উত্তরণের একমাত্র সম্মানজনক পথ দ্রুত নির্বাচন দেওয়া এবং এর মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। দ্বিতীয়ত, যদি এভাবেই থাকে তাহলে সরকারকে ভঙ্গুর অবস্থার মধ্য দিয়েই যেতে হবে, তবে এভাবেও সে বেশি দিন যেতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম সময়ের আলোকে বলেন, কোন প্রতিষ্ঠিত দল প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেননি। তাহলে পদত্যাগের প্রশ্ন আসলো কেন? অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীর সঙ্গেও বিতর্কে জড়িয়ে গেছে। প্রধান উপদেষ্টা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর উনার নির্দেশনায় একটি দল গঠিত হয়েছে। ওই দলটি যেভাবে হুমকি-ধমকি দেয়, সেইভাবে সরকার কাজ করে। তারাই দেশকে অস্থিতিশীল তৈরি করে তুলছে। সারাদেশে মব ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন কোন না কোন মবের শিকার কেউ না কেউ হচ্ছেন। সারাদেশে তৌহিদী জনতার নামসহ নানা ব্যানারে মব তৈরি করছে। তাদের সঙ্গে মতের অমিল হলেই আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করছে। কিন্তু এই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল সেটি কিন্তু পূরণ হয়নি। গত ১০ মাস হুমকি-ধমকি চলছেই। সর্বশেষ করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ইস্যুকে কেন্দ্র করে দেশে একটি রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এই কাজ তো কোন অন্তর্বর্তী সরকারের নয়। তারা কেন এইসব কাজে হাত দিতে গেল। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে ন্যূনতম সংস্কার করে একটি ফ্রি এ্যান্ড ফেয়ার নির্বাচন দেওয়া। এই মুহূর্তে দরকার নির্বাচিত সরকার। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার না আসবে সে পর্যন্ত দেশের যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অবসান হবে না। দেশে আইনের শাসন ইেন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। তারা কথায় কথায় বলে ন্যূনতম সংস্কার হলে ডিসেম্বরে আর আর বেশি হলে জুনের নির্বাচন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ তারা দেয়নি। এটি হলো নির্বাচনকে দূরে রাখার একটি কৌশল মাত্র। প্রধান উপদেষ্টার উচিত সম্মান নিয়ে, নির্বাচন দিয়ে চলে যাওয়া। এটি যদি তিনি না করতে পারলে দায় তাকেই নিতে হবে। তার ইশারায় গঠিত দলটি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। তারা এখন বলছে, আগে স্থানীয় নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন। আবার বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। এর অর্থ হল নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র। ‌ এই ষড়যন্ত্র করে সরকার বেশিদিন টিকে থাকতে পারবে না।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন সময়ের আলোকে বলেন, উত্তেজনা, অনিশ্চয়তা এবং আশংকার মধ্যে কাটছে সময়। দেশের রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন বা খোঁজ রাখেন তাদের কপালে চিন্তার রেখা ক্রমশ গভীর হচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে নানাধরনের উত্তেজনাপুর্ন ঘটনা, পদক্ষেপ ও মন্তব্যের পর গত ২২ মে দাবানলের মত খবর ছড়িয়ে পড়ে অন্তরবর্তিকালিন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ইউনুস পদত্যাগের কথা ভাবছেন। গভীর রাতে প্রেস সচিবের ফেসবুক স্ট্যাটাস আর এক নতুন সংশয় সৃষ্টি করেছে। কিন্তু সংশয় তো সমাধান নয় মানুষ জানতে চায়, এই যে অনিশ্চয়তা এর সমাপ্তি কোথায় এবং কোন পথে?  বিষয়টা আকস্মিক বলে মনে হলেও অপ্রত্যাশিত নয়। নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে সরকারের উপর যেমন চাপ বাড়ছে তেমনি অনেক গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত বিক্ষোভেরও জন্ম দিয়েছে। গত কয়েকদিনে ঢাকাবাসী নানা দাবিতে বড় বড় সমাবেশ দেখেছে। প্রায় সব সমাবেশের লক্ষ্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনা। দিন রাত ঘেরাও করে রাখা, অবস্থান করা এবং দাবি আদায় করে ফিরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে। পছন্দের রাজনৈতিক সংগঠনের আন্দোলনে সহায়তা, অপছন্দ হলে মামলা ও গ্রেফতার করে হয়রানি, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নিয়ে জটিলতা, নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি, উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি, করিডোর, বন্দর ও মব ভায়লেন্স এমনকি নির্বাচন নিয়ে সেনা প্রধানের বক্তব্য বলে যা পত্রিকায় এসেছে তা ক্ষমতাকেন্দ্রে অস্থিরতার বহিপ্রকাশ বলে মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের মনোভাব অনেক ধরনের সন্দেহের জন্ম দেবে। তিনি কি চাপে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান নাকি এটা  তার চাপ প্রয়োগের কৌশল? এই ধরনের আলোচনাও তৈরি হয়েছে। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় দেশের মানুষ চায় সংকট থেকে উত্তরনের পথনির্দেশ এবং পথনকশা। প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করলে উপদেষ্টামণ্ডলী কি থাকতে পারবেন? ফলে পদত্যাগ এই সময়ে কোন সমাধান দেবে না। একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেশের মানুষের চাওয়া, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এবং সময়ক্ষেপন না করে সেই নির্বাচনের পথ নকশা তৈরি করলে এই আস্থা জন্ম নেবে যে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ইচ্ছা বা চেষ্টা কোনটাই অন্তরবর্তিকালিন সরকারের নেই। এই ঘোষণা দিতে না পারার কারনে সন্দেহ ঘন হয়ে উঠেছে সব জায়গায়। গণঅভ্যুত্থানের গণপ্রত্যাশা যেন মার না খায় সেই দায় দায়িত্ব অন্তরবর্তিকালিন সরকারকে নিতে হবে। এখানে হাল ছেড়ে দেয়া বা কালক্ষেপণ করা দেশের জন্য বিপজ্জনক।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন সময়ের আলোকে বলেন, বিচার,সংস্কার এবং নির্বাচনÍ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শুধুমাত্র এই তিন বিষয়ে এজেন্ডা হওয়া উচিত। মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে আমরা যে নির্বাচনের কথা বলছি, এই বিষয়টাতে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যমতে আনতে হবে। সংকট উত্তরনের সমাধান রাজনৈতিক ঐক্যমত, এর কোনো বিকল্প নাই। সব পক্ষেই হতাশা আছে, সেইসাথে সকল পক্ষেরই নানান ধরনের ‘কনফিউশন’ আছে। কিন্তু এর মধ্যেই সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগটা আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন সময়ে ‘দায়িত্বহীন’ আচরণ করতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব আলাউদ্দীন মোহাম্মদ সময়ের আলোকে বলেন, আমাদের সব রাজনৈতিক দলগুলোকেই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। এনসিপিকে দল হিসেবে সাংগঠনিকভাবে দাঁড়িয়ে যেতে হবে এবং পাশাপাশি গণ অভ্যুত্থানের হিস্যা আছে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে হবে। এনসিপি পরিকল্পনা করে কারো সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে না। এনসিপি যখন ‘হক’ কথা বলে, জনআকাঙ্ক্ষার কথা বলে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কারো কারো সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। এনসিপির উচিত কিছুটা কম্প্রোমাইজ করে হলেও গণ অভ্যুত্থানের ঐক্যের স্বার্থে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একটা পুনর্গঠিত রাষ্ট্র্ব, পুনর্গঠিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটি অবাধ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণে সহায়তা করা। এনসিপি মধ্যপন্থায় চলতে প্রস্তুত, কিন্তু বাকি সবাইকেও মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে এগিয়ে আসতে হবে।

সুত্র: সময়ের আলো।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন