নিজস্ব প্রতিবেদক:
নানান নাটকীয়তার পর অবশেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রস্তাব মেনে নিয়ে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে রাজি হলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের পর যে যৌথ ঘোষণায় এতথ্য জানানো হয়েছে।
যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী, বৈঠকে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। তারেক জানান, দলের চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়। তখন মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনা মেনে নিয়ে বলা হয়, রোজা শুরুর ‘আগের সপ্তাহেও’ (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) ভোট করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে লন্ডনের পার্ক লেইনে ডরচেস্টার হোটেলে বৈঠকে বসেন মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান। বৈঠক শেষে বাংলাদেশী সময় ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে হোটেল ত্যাগ করেন তারেক রহমান। বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
যৌথ ঘোষণায় বলা হয় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন যে তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালে রোজা শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সেই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেকের বৈঠক ঘিরে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে বেশ আগ্রহ ছিল। রাজনৈতিক অঙ্গন, হোটেল-রেস্তারাঁ, টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠান, পত্রপত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- সবখানেই এ নিয়ে আলোচনা চলে। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার পর কোনো সরকারপ্রধানের সঙ্গে এটিই তার প্রথম একান্ত বৈঠক।
গত কয়েক মাস ধরে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ ডিসেম্বরের মধ্যেই সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের একাধিক সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একই দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে কোরবানির ঈদের আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধে সংসদ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ দল।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠককে ঘিরে দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। রাজনৈতিক অঙ্গন, হোটেল-রেস্তারাঁ, টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠান, পত্রপত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- সবখানেই আলোচনা হচ্ছে।
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি একটি ‘টার্নিং পয়েন্টে’ পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘চতুর্দিকে একটা অনিশ্চয়তা ছিলো এবং অনেকে অনেক কথা বলছিলো বিভিন্নভাবে। আজকে এই দুই নেতা প্রমাণ করলেন যে বাংলাদেশের মানুষ এখনও প্রয়োজনের সময় ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।’
শুক্রবার বিকেলে গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৈঠকটির পরে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষিত নির্বাচনের সময়সীমা উপযুক্ত নয় বলে সেটিকে এগিয়ে আনার বিষয়ে তারেক রহমানের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা সম্মত হয়েছেন এবং তারা ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। এখন প্রয়োজন অতীতের কথা ভুলে গিয়ে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দিয়ে জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা। এই বৈঠকে সফল হওয়ার মাধ্যমে তারেক রহমান তার রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণ প্রমাণ করেছেন।