ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে

387
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :আজ ৫ আগস্ট, ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস। বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে ২০২৪ সালের আজকের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পালিয়ে যান সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী ও এমপিসহ শীর্ষ নেতা। জুলাই গণঅভ্যুত্থান ছিল দীর্ঘ বঞ্চনা, দুঃশাসন, দুর্নীতি, লুটপাট, গুম, খুন, অপহরণ, ভোটাধিকার হরণসহ সব ধরনের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্ম ও আপামর জনতার ক্ষোভের বিস্ফোরণ। বৈষম্যমূলক ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করাই ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য। দিবসটি উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এ দিন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সব সার্কেল অফিস স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে রাস্তার পাশে বা নিজস্ব জায়গায়, ট্রাফিক ইন্টারসেকশনে বনজ, ফলদ ও ওষুধি গাছের চারা রোপণ করবে বলে তথ্য বিবরণীতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস পালনের লক্ষ্যে ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং স্পেশাল ড্রোন ড্রামার আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানমালা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। গণঅভ্যুত্থান দিবসে দেশের ৬৪ জেলায় জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে সকাল ৯টায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এ দিন দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জুলাই নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে ঐতিহাসিক এই অর্জনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশের মুক্তিকামী ছাত্র-জনতাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সব শহিদকে, যারা দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। এ গণঅভ্যুত্থানে আহত, পঙ্গুত্ববরণ করা ও দৃষ্টিশক্তি হারানো সব বীর জুলাই যোদ্ধার ত্যাগ ও অবদান আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার ও আহতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেন, একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করে জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্র একটি ব্যাপক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। এই সংস্কারে গণঅভ্যুত্থানের আশা-আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হবে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক উত্তরণের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠবে একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ। আজকের দিনে এ আমার একান্ত প্রত্যাশা।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বাণীতে বলেন, জুলাই আমাদের নতুন আশার আলো-একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে। হাজারো শহীদের আত্মত্যাগ আমাদের রাষ্ট্র সংস্কারের যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। পতিত স্বৈরাচার ও তার স্বার্থলোভী গোষ্ঠী এখনও দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। আসুন সবাই মিলে আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচারের ঠাঁই হবে না।

গণঅভ্যুত্থান দিবসের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন আজ (৫ আগস্ট)। এক বছর আগে এই দিনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পূর্ণতা পায়, দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয় প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, যাদের আন্দোলনের ফসল আমাদের এই ঐতিহাসিক অর্জন, তাদের সবাইকে আমি এই দিনে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আজ আমি স্মরণ করছি সেই সব সাহসী তরুণ, শ্রমিক, দিনমজুর, পেশাজীবীদের, যারা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মোকাবিলা করতে গিয়ে শাহাদাতবরণ করেছেন। আমি গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করি সকল জুলাই যোদ্ধাকে যারা আহত হয়েছেন, চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন, হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। জাতি তাদের অবদান শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।’ গণঅভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান তিনি।

টানা ১৬ বছরের স্বৈরাচারী অপশাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত বিস্ফোরণ ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতি ও স্বৈরাচারমুক্ত নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে রাষ্ট্রকে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব খাতে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। জুলাই গণহত্যার বিচারের কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। জুলাই শহীদদের স্মৃতি রক্ষা ও আহত জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ত্বরান্বিত করতে রাজনৈতিক ও নির্বাচনব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা চলমান আছে। একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধানের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন